অন্ত্যজদের কথক
আদাড়া ঠাকুর
অতুল ঐশ্বর্য নিয়ে তোমার চৌদল সাজিয়েছ।
ঘোড়াটি বিপুল আর নীলকান্ত ধ্বজা ওড়ে
স্তম্ভের উপরে।
ই দিকে তাকাও কত্তা, গাঁ-কে গাঁ উজাড়।
ডাইনির নজরে শ্যেষ,
মড়াকান্না শোনে জানগুরু।
আমরা মুদুন কাঁধে গিধরা-পিধরা নিয়ে
কোথায় বসত গড়ব আদাড়া ঠাকুর ?
জাহের হাড়াম
ক্যেঁদ ঝোড়, বেগুন্যালাটা, আঁশ শেওড়া ঝোপের ভিতর,
কাড়ি কাড়ি চাঁদির পাহাড়।
জাহের হাড়াম বলছে, নাই থাকব বাহাহাতু গাঁয়ে।
দণ্ডবৎ করে বলি, কেনে কত্তা, কি করেছি বল ?
জিহড় লতায় নামছে ঘুটঘুট্যা আঁধার,
গ্রাম দেবতার চোখে জল।
কাণ্ডেশ্বর
ডিঙি দুলছে কালো ঢেউয়ে,
কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে ধুলো;
ঊর্ধ্বমুখ শ্রীকালি গর্জায়, মড়া গড়াচ্ছে শ্মশানে।
পিঙ্গল বিড়ুলে ধায় পতন-সংকেত।
চতুষ্পথে আর্তধ্বনি : বাঁচাও...বাঁচাও...
কাণ্ডেশ্বর মুখ তোলো, যদি শেষ রক্ষা হয়...
লখন মাঝি
তড়াং-দাড়াং ডিঙে ধুল ধুল পায়ে,
আসছে লখন মাঝি দূরদেশ থেকে।
কাঁধে মড়া সঙ্গিনীটি, মুখ খোলে সারেঙ্গায়,
এই ঠেনে পুঁতে দে আমাকে।
মড়া পুঁতে ওখানেই গড়ে উঠল হাসাহাতু গ্রাম।
পাশে জোড়, লিগিড়ধা...লিগিড়ধা জল বয়
গাঁও বুড়া হাঁক পাড়ে, হুঁ হুঁ বাপ
লখন মাঝির আমরা লতা বেড়া,
কিরা খাঁইয়ে বলছি, উনি যে সে বঙা লয়।
বাগরাই সিং
মট-বিড়া লিয়ে ভাগছি ইঁদাড়া-পিঁদাড়ে,
মাগ-ছ্যেলা লিয়ে ভাগছি সেনেড়ার জোড়ে;
রণ-বন ভাইঙ্গে ভাগছি হুড়ালের ডরে।
কুথায় হে গোষ্ট কাকা,
কেঁদ ঝোড়ে লুকালে কোথায়?
হামদেরকে হিম্মৎ দাও, বাগরাই সিং
আং সিং বাং সিং
আং সিং বাং সিং ডাঙাল্যা পাড়ার,
বাগাইলার ঘর কুনঠা বল
যদি লিখি গীত, বলছে হাত কাটে লিব,
তবে কেনে বাজিছে মাদল?
কেনে ছোটে গোয়ালিনী রণ-বন ভেঙে,
ছিন্নভিন্ন কত্তার পাহারা।
বতরে পিরিতের ফুল ফুটে আধা রাইতে,
হড়পার বান রোখে কারা?