মহাভার

Mahabar
উপন্যাস

মহাভার

খেয়ানৌকো পারে ভিড়ল। জমজম প্রথম পা নামাতেই প্রায় হাঁটু অব্দি তলিয়ে যায়। দ্বিতীয় পা নামিয়ে প্রথম পা তুলতে গিয়ে বিপত্তি—টাল সামলাতে না পেরে ডান দিকে হেলে যাচ্ছে, ঝোলা ব্যাগটা কাঁধ থেকে পিছলে পড়ছে। কোনোক্রমে নিজেকে সামলে, ব্যাগ সামলে বেশ একটু প্রস্তুতিসহ প্রথম পা-টা কষ্টেসৃষ্টে তুলে নিয়ে সামনে বাড়াল। এভাবে কয়েক কদম সতর্ক ভঙ্গিতে এগিয়ে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকে। আবার তার আজন্ম জল-কাদায় হাঁটার অভ্যেসটা ফিরে আসে। কাদা-মাটির তীরটুকু পেরিয়ে শক্ত ডাঙায় উঠে সে পেছন ঘুরে দেখল, খেয়ামাঝি নৌকো ফিরিয়ে অনেকটা দূরে চলে গেছে। নৌকোয় মাঝি ছাড়া আর কোনো যাত্রী নেই। নদীতে আর কোনো নৌকো নেই। নদীর দুই পারে আর কোনো লোক নেই।
তিন দিন অবিরাম বর্ষণের পর সবেমাত্র বৃষ্টি থেমেছে। কিন্তু শ্রাবণের আকাশ ঘন মেঘে আচ্ছন্ন। যে কোনো মুহূর্তে আবার ভারি বর্ষা শুরু হবে। এখনো সন্ধ্যা নামেনি, বিকেল। তথাপি আকাশভরা কালো মেঘের চাপে আবছা আঁধার। জমজম নদীর পার বেয়ে হাঁটতে আরম্ভ করে। বাম দিকে ভাটির টানে বহতা নদী। সামনেই কিছুটা দূরে ওর গ্রাম। ডানদিকে বিস্তারিত জলময় ধানের খেত। দিনের কাজ শেষ করে কিষানেরা যে যার ঘরে ফিরে গেছে। তাদের সদ্য রোয়া ধানগাছের ডগাটুকু শুধু জলের ওপর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই জলমগ্ন ধানখেত পেরিয়ে আর একটা নদী। সেই নদীর পরে আরো একটা প্রাম। দূরের সেই আবছা গ্রামের পর যেন আর কিছু নেই। এ বিশ্ব-বসুধার যেন সেখানেই শেষ। তারপর অবারিত অন্ধকার।
জমজম হাঁটতে হাঁটতে ওর গাঁয়ের প্রান্তে এসে একটু দাঁড়াল। সমস্ত গাছের পাতায় ফোঁটা ফোঁটা বিন্দু বিন্দু জল। সেই সজল পাতায় চোখ পড়তে ওর মনে হল, পাতারা তাকিয়ে আছে!

About author

Add Your comments

Your Name *

Your Mail *

Phone

Subject

Your Comments*